"যখন এত বড় ক্ষতি সামলে নিয়েছি, তখন এই ছোটোখাটো ক্ষতি তে কিছু হবে না।" এই কথাটা অয়ন ঈশার চোখে চোখ রেখে বলল। ঈশা আর কিছু বলল না। দুজনের মাঝে অদ্ভুত একটা ঝড় বয়ে চলেছে।
"যাই হোক! তুমি নিজের প্রিয়জনদের সাথে হাঁসি খুশি আছো, দেখে ভালো লাগে। আমিও নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি। ভালো লাগলো তুমি নিজে সময় বের করে আসলে আমার সাথে নষ্ট করার জন্য।" অয়ন তৃতীয় সিগারেট ধরিয়ে ফেলল কিন্তু ঈশা ওর মুখ থেকে টেনে ছুড়ে ফেলে দেয় এক দিকে। অয়ন অবাক হয়ে তাকাল।
"ভালো মুখে বললে শোনো না তাই কিছু করার ছিল না। তোমার সাথে আমি কিছুক্ষণ সময় কাটাতে এসেছিলাম। এই জায়গায় তেই এসেছি যাতে তোমাকে....." ঈশা কিছু বলতে যাবে তখন ওর ফোন বেজে উঠল। প্রায় মিনিট একের পর ওর মুখ থেকে "ঠিক আছে" বেড়াল।
"সময় হয়ে গেছে।" ঈশা কল কেটে বলল।
"তোমার নেক্সট রাউন্ড শুরু হয়ে গেছে হয়তো। সাবধানে যাও এন্ড অল দি বেস্ট।" অয়ন বলে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ঈশা কিছু বলতে চাইছিল যেটা ও বুঝতে পারে- "কিছু বলবে?"
"বলতে অনেক কিছু চাই কিন্তু ওর জন্য এটা সঠিক জায়গাও না আর অত সময় নেই। তবে একটাই কথা বলব, তোমাকে এরকম দেখে আমার অস্থির লাগছে।"
"আমি ঠিক আছি। তুমি যাওয়ার পরে যেই ফাঁকটি রয়ে গেছিল, সেটা থেকেই নিজের কিছু অংশ জড় করছি।" অয়ন এগিয়ে যাচ্ছে তখন ঈশা অয়নের হাতটা ধরে। হাতের ওপরে হাতটা রেখে বলল- "ফাঁক তোমার একার জীবনে নেই, সবার আছে কিন্তু..."
"কিন্তু কি? মেনে নিতে হবে? এগিয়ে যেতে হবে? তাই করছি। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না, যদিও আমার কিছুও হোক।" ঈশা হাতটা ধরে বুঝলো হাত ঠান্ডা হয়ে আসছে। ওকে ধরে বসাল। হয়তো এটা ঈশাই ছিল বলে অয়নের ওপর জিনিসটা সেরকম ক্ষতি করেনি। অয়নের মুখে হালকা একটা হাঁসি ভেসে ওঠে।
"একটা কথা জানো তো ঈশা, এই কথা আমি মানছি তোমার। ফাঁক সবার জীবনেই থাকে। তোমার জীবনেও একটা ছোট ফাঁক রয়ে গেল। তোমার পার্টনার তোমাকে ভালো রাখতে পারে, কিন্তু আমার মত যত্ন করতে পারবে না। তোমাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরবে কিন্তু আমার মত অপেক্ষা করতে পারবে না। ভালবাসবে কিন্তু আমার মত ভালবাসতে পারবে না। আর হ্যাঁ, যদি তোমার মনে হয় কি আমি অহংকারে বলছি, তাহলে এটাই ঠিক। আমার আছে অহংকার নিজের ভালোবাসার ওপর।"
অয়ন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ঈশা আর কিছু বলল না। দুজনের মনের এক অংশ কথাও এখোনো বাইরে আসেনি। দুজনের কাছে একটাই জিনিস কম, সঠিক সময়, সঠিক জায়গা।
দুজনে একসাথে এগোলো। অয়ন আগে হাঁটছিল। ওর পায়ের গতির সাথে ওর মনের গতি এক ভাবে এগোচ্ছে আর ফুটে উঠছে জল হয়ে। অয়ন একটু থামল যখন চোখে ঝাপসা হয়ে গেছে। জল মুছে ও একবার পিছনে তাকাল দেখতে ঈশা পিছনে আছে কি নেই। এই বার ঈশা ওর দিকেই তাকিয়ে। লিফটে উঠে ও অয়নের পাশে দাঁড়ায় আর হাতটা ধরে। এইবার একটু জোরে আর কানে একটা কথা বলে- "আমি তোমার জন্যই আছি এখানে।" চোখের জল টা মুছে দিয়ে ঈশা বেড়িয়ে গেল।
©Ananta Dasgupta
Continue with Social Accounts
Facebook Googleor already have account Login Here